ক্যালকেনিয়াম স্পার (Calcaneal Spur) হলো গোড়ালির হাড়ের নিচে একটি অতিরিক্ত হাড়ের বৃদ্ধি বা অস্থির গঠন, যা সাধারণত গোড়ালির ব্যথার অন্যতম কারণ হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত ক্যালকেনিয়াম হাড়ে, যা গোড়ালি বা পায়ের পেছনে থাকে, এক ধরনের অতিরিক্ত হাড়ের বৃদ্ধি হিসেবে দেখা দেয়। ক্যালকেনিয়াম স্পার সাধারণত সেই স্থানটিতে গঠন হয় যেখানে প্লান্টার ফ্যাসিয়াটিস (Plantar Fasciitis) নামক সমস্যা হতে পারে। যদিও ক্যালকেনিয়াম স্পারের অস্তিত্ব শারীরিকভাবে অনেক সময় অনুভূত হয় না, তবে এটি খুবই ব্যথাজনক হতে পারে এবং চলাফেরায় অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।
ক্যালকেনিয়াম স্পারের কারণ:
ক্যালকেনিয়াম স্পারের গঠন প্রধানত অঙ্গভঙ্গি বা চাপের কারণে হয়, যা পায়ের তলা বা গোড়ালির পেশি এবং লিগামেন্টে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এর কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- অতিরিক্ত চাপ বা স্ট্রেন:
গোড়ালির নিচের ফ্যাসিয়া (Plantar Fascia) উপরে অতিরিক্ত চাপ বা স্ট্রেন তৈরি হলে তা হাড়ে ক্রমশ ক্ষতি করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত ক্যালকেনিয়াম স্পারের দিকে নিয়ে যায়। - অতিরিক্ত শরীরের ওজন:
অতিরিক্ত ওজন বা মুটিয়ে যাওয়ার কারণে পায়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং এটি ক্যালকেনিয়াম স্পারের গঠনকে ত্বরান্বিত করতে পারে। - অস্বস্তিকর বা অবাঞ্ছিত জুতো পরা:
অস্বস্তিকর বা উচ্চ হিলযুক্ত জুতো পরা, যা গোড়ালিতে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে, ক্যালকেনিয়াম স্পারের জন্য একটি বড় কারণ হতে পারে। - অলস বা কম পরিশ্রমী জীবনযাত্রা:
যারা শারীরিকভাবে কম সক্রিয় বা দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় বসে কাজ করেন, তাদের পায়ের পেশি দুর্বল হতে পারে, যা ক্যালকেনিয়াম স্পারের ঝুঁকি বাড়ায়। - অন্যান্য হাড়ের বা পেশির সমস্যা:
পায়ের আঙ্গুলের ভাঁজ বা পায়ের গোলমাল সমস্যা (মুল্লুক অঙ্গের বিকৃতি) ক্যালকেনিয়াম স্পার তৈরির জন্য সহায়ক হতে পারে।
ক্যালকেনিয়াম স্পারের লক্ষণসমূহ:
- ক্যালকেনিয়াম স্পারের লক্ষণ সাধারণত নিম্নরূপ:
- গোড়ালির তলদেশে ব্যথা:
প্রাথমিকভাবে, হাঁটতে গিয়ে গোড়ালির তলায় তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে সকালে প্রথমবার হাঁটার সময়। - গোড়ালির ফুলে ওঠা:
গোড়ালির নিচে এক ধরনের ফুলে ওঠা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বা হাঁটলে বৃদ্ধি পায়। - গোড়ালির চলাচল কষ্টকর হওয়া:
ক্যালকেনিয়াম স্পারের কারণে পা বা গোড়ালি চলাতে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যখন দেহের ওজন পুরোপুরি পায়ের উপর থাকে।
ক্যালকেনিয়াম স্পারের চিকিৎসা এবং প্রতিকার সাধারণত সহজ হলেও কখনো কখনো এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তবে কিছু উপায় অবলম্বন করে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব:
- বিশ্রাম:
বেশি হাঁটা বা দাঁড়ানোর কারণে গোড়ালির উপর চাপ কমানোর জন্য বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ফ্যাসিয়ার আঘাত থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করে। - স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ:
পায়ের পেশি এবং ফ্যাসিয়া স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে হালকা করতে পারে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত পায়ের তলা ও গোড়ালির স্ট্রেচিং ব্যায়াম খুবই কার্যকর। - গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক:
গোড়ালিতে গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক দেয়ার মাধ্যমে ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া কমানো যেতে পারে। এটি অঙ্গভঙ্গি বা প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে। - ফুটওয়্যার পরিবর্তন:
অস্বস্তিকর বা উচ্চ হিলযুক্ত জুতো পরা থেকে বিরত থাকা উচিত। এমন জুতো পরুন যেগুলো গোড়ালির জন্য আরামদায়ক এবং পায়ের সঠিক আর্চ সমর্থন করে। - ফুটপ্যাড ব্যবহার:
বিশেষ ফুটপ্যাড বা আর্চ সাপোর্ট ব্যবহার করলে গোড়ালির উপর চাপ কমিয়ে এটি ব্যথা হ্রাস করতে সহায়তা করে। এগুলি পায়ের তলায় অতিরিক্ত চাপ কমিয়ে পেশি বা হাড়ের চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। - অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ:
দাবান বা প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যথা কমাতে সহায়তা করবে। - ফিজিওথেরাপি বা স্টেরয়েড ইনজেকশন:
যদি সাধারণ চিকিৎসায় কাজ না হয়, তবে ফিজিওথেরাপি বা স্টেরয়েড ইনজেকশনও সাহায্য করতে পারে। স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে গোড়ালির প্রদাহ কমানো যেতে পারে। - সার্জারি (অত্যাবশ্যক হলে):
খুব দুর্বল বা দীর্ঘস্থায়ী ক্যালকেনিয়াম স্পারের ক্ষেত্রে, সার্জারি করতে হতে পারে। তবে এটি খুবই বিরল, এবং সাধারণত অন্যান্য চিকিৎসা কার্যকর না হলে এটি করা হয়।
ক্যালকেনিয়াম স্পার বা গোড়ালির হাড়ের বৃদ্ধি একটি পরিচিত কিন্তু ব্যথাযুক্ত সমস্যা। এটি কিছু বিশেষ কারণে হয়ে থাকে, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহণ করে সহজেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। পায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা এবং সঠিক ফুটওয়্যার পরিধান করার মাধ্যমে ক্যালকেনিয়াম স্পার প্রতিরোধ সম্ভব।
আরও দেখুন: